ভিডিও মার্কেটিং শিখুন, বেস্ট প্যাসিভ ইনকামের রাস্তা তৈরি করুন।

অনলাইন জগতে উপার্জনের মাধ্যম গুলোর মধ্যে ভিডিও মার্কেটিং বর্তমান সময়ে উপরের অবস্থানে আছে । মার্কেটপ্লেসে এটার যেমন চাহিদা আছে, আমাদের বাস্তব জীবনেও ব্যাপক চাহিদা আছে। আমাদের দরকার শুধু প্রো লেভেলের ভিডিও মার্কেটার যারা আসলেই কন্টেন্ট এর ভ্যালু বুঝে কাজ করে। ভিডিও মার্কেটিং করতে চাইলে গবেষণা মূলক ভিডিও তৈরি করতে হবে। মানে আপনার ভিডিওতে শিক্ষনীয় আকর্ষন থাকতে হবে। আর যদি কুরুচিপূর্ণ ভিডিও মার্কেটিং করতে চান তাহলে সস্তা পণ্য হয়েই থাকতে হবে আপনাকে। আপনার পাপের বোঝা ভারি হবে।

আপনি একটু কল্পনা করে দেখুন, ভিডিও দেখে কেউ সঠিক রাস্তা পাচ্ছে। কেউ নিজেকে দক্ষ ও উন্নত করছে আবার কেউ ভিডিও দেখেই অন্ধকার রাস্তা বেছে নিচ্ছে। তাই ভিডিও মার্কেটিং করার আগে অবশ্যই বিষয়বস্তু ও আপনার সৃজনশীলতা খাতা কলমে নোট করে ফেলুন। যা আপনাকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করবে। সব সময় কাজ করবেন ভাল কিছু প্রচার করার জন্য, মানুষকে জানানোর জন্য। তাহলে মানুষিক ভাবে আনন্দে ও পবিত্রতায় থাকবেন।

আমি এক সাক্ষাতে একজন বড় মাপের ভিডিও মার্কেটারকে প্রশ্ন করেছিলাম, কোন বিষয়ের উপর আমার ভিডিও মার্কেটিং করা উচিৎ। তিনি আমাকে উত্তর করেছিলেন, আপনি যে বিষয়ে আপনার জব/পেশা সে বিষয় নিয়ে ভিডিও বানানো উচিৎ। মানে আপনার পেশা রিলেটেড ভিডিও প্রচার করা উচিৎ। ভিডিও গুলো হতে পারে এক ধরনের আলোচনা বা ডিসিশন মেকিং বা প্রবলেম সলভিং । বাজারে নতুন কোন জিনিস আসলে সেটা কিভাবে অপারেটিং করতে হয় সে বিষয়ও হতে পারে। মাছ রোগাক্রান্ত হলে কিভাবে জীবানু মুক্ত করতে হবে সে বিষয়ে হতে পারে।

আমি বললাম আমি তো জব করি না। আমি তো স্টুডেন্ট! আমি কি নিয়ে ভিডিও বানাতে পারি? তিনি আমাকে বললেন তুমি কি এখন অব্দি কোন অনলাইন কোর্স বা ক্লাস করেছো? আমি বললাম হ্যা করেছি, অনেক ফ্রি ও পেইড কোর্সও করেছি। তিনি বললেন তাহলে তো ঠিকই আছে। দেখেছো তো স্যাররা ভিডিওতে বা লাইভ ক্লাসে তোমাদের পড়া বুঝানোর চেষ্টা করেছে যেন একই সাথে অনেকেই শিখতে পারে। একটি বিষয়কে সহজ ভাবে তোমাদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে। ভিডিও বা ক্লাস একটি কিন্তু দেখছে বা শিখছে কত স্টুডেন্ট!

তুমি চাইলে তুমার পড়াশোনার বিষয়কে ফোকাস করে ভিডিও বানাতে পারো যা আগে কেই বানাইনি। যা তোমার স্যারের চাইতেউ সুন্দর হতে পারে। দেখবে তুমি ভিডিওর মাধ্যমে শিখিয়ে মজা পাচ্ছো। কোন অজানা রহস্যকে প্রকাশ করতে তোমার আনন্দ হচ্ছে। এই ধরো আমি প্রতিদিন একটি চ্যানেলে আবদ্ধ পদ্ধতিতে কিভাবে মাছ চাষ করতে সেটার খুটিনাটি বিষয় দেখি । এই আবদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ চাষ আমার একটা শখ যে বিষয়ে জানলে আমার আরো ভাল লাগে। মনে তৃপ্তি লাগে।

মজার বিষয় হচ্ছে আমি যার ভিডিও দেখি লোকটি আবদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ চাষের উপর বিভিন্ন অজানাকে সামনে ধরে ভিডিও দেয়। যা আমার অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। সে লোকটি মাছের বীজ/পোনা বিক্রি করে আজ কোটিপতি হয়েছে। বিষয়টা কিন্তু এমন না যে সে তার চ্যানেলের এড সেন্স থেকে আজ কোটিপতি হয়েছে। এড সেন্স উপরি ইনকাম যা তিনি গরিব মিসকিনদের দান করেন তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা বাবদে। এটা তার মনের তৃপ্তি। এমন আরো অনেক দৃষ্টান্ত আছে আমার জানা মতে। তাই তোমার ফোকাস হতে হবে যেন তুমি প্রয়োজনে আমাদের পাশে আছো তোমার ভিডিও দিয়ে।

এত সুন্দর গল্প ভিত্তিক উত্তরে আমি অবশ্য প্রশ্ন হারিয়ে ফেলেছিলাম, তাকে আর কি প্রশ্ন করা যায়! তাই ছট করে রিডারদের জন্য তার কাছে প্রশ্ন রাখলাম যে, আসলে ভিডিও মার্কেটিং এর বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে একজন কিভাবে করতে পারে?

বিজ্ঞ সেই মার্কেটারের কিছু মার্কেটিং টিপস আমি এখন শেয়ার করবো। তার সাথে কথা বলার এই অল্প সময় আমার কাছে খুব আনন্দের ছিল। তার তুলনায় আমি বয়সে অনেক ছোট হওয়াতে তিনি আমাকে তুমি বলেই গল্পের ছলে কিছু উত্তর করলেন।

তুমি কিন্তু জানো শুধু ইউটিউব বা ফেসবুকই ভিডিও মার্কেটিং এর জায়গা নয়। আরো অনেক প্লাটফর্ম আছে যেখানে ভিডিও প্রোমোশন করা যায় ও মার্কেটিং করা যায়। সেই প্লাটফর্ম গুলোতে যুক্ত হয়ে তোমার ভিডিও প্রোমোশন করতে পারো। অবশ্য আমার কথা গুলো এখন একটু গভীর হয়ে যাবে। আরো কিছু টুলস রয়েছে যার সাহায্যে ভিডিও গুলোকে মানুষের সার্চ হিসাবে পাবলিশ করা যায়। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আসলে এই গভিরেই একজন ভিডিও মার্কেটার কাজ করে। একটি ভিডিও জীবন পরিবর্তন করতে পারে অনেক মানুষের। এমনকি তোমারও। আমি বেশ বুঝলাম উনি আসলেই একজন হুক মার্কেটার। যিনি সিম্পল জিনিসেই ব্যাপক ভ্যালু এড করতে জানেন।

ভিডিও নিয়ে কাজ করতে হলে ভিডিও এডিটিং টুলস বা সফটওয়্যার নিয়ে প্রো লেভেল জ্ঞান থাকতেই হবে। নিজের একটি ভিডিও মন মত এডিট করে পাবলিশ করতে বেশ আলাদা একটা মজা কাজ করে। ভিডিও কোয়ালিটি, সাইন্ড কোয়ালিটি, কাট, সাট, এড, প্রোমোশন সব কিছু সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে। তখন যে কোন কিছু দেখলে আপনা মাথায় কন্টেন্ট আইডিয়া চলে আসবে। এই কন্টেন্ট গুলোই ভিডিও রুপে মানুষের সামনে আসবে। এটাও একটা অনেক বড় শিল্প।

প্রয়োজনে নিজের পার্সোনাল কর্ণারে বসে প্রতিদিন ভিডিও এডিং দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে৷ কিছুই করার নেই, নতুন কিছু শুরু করতে গেলে নতুন কিছু দক্ষতার তো অবশ্যই দরকার হবেই। এটা নিজের কাছে নিজের দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। নিজের কাজকে নিজেই রেটিং ও সর্টিউ করতে হবে। নয়ত এখানেই ভিডিও মার্কেটিং এর ইচ্ছা থেমে যেতে পারে। সাধনা ও অধ্যবসায় এর পরিক্ষা দিতেই হবে।

ভিডিও মার্কেটিং দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একটি ইনকামের রাস্তা উন্মোচিত হতে পারে তোমাদের জন্য। যার মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে ও নিজেকে আরো ব্যবহার করে নিতে পারছে। অন্তত অলস সময় পাড় করার চাইতে এটা ভাল সুযোগ। আসলে সবই তোমাদের মত ইয়াংদের সৃজনশীলতার ফল যা আজ আমরা ব্যবহার করছি ও জানছি।আমি বেশ অবাক হলাম তিনি এত সিনিয়র ও এত বড় মার্কেটার হয়েও তরুনদের সৃজনশীলতাকে কতটা প্রাধান্য দেন!

তুমি আজকে যে ভিডিও পাবলিশ করছো এর আউটকাম কিন্তু তুমি পেতেই থাকবে পেতেই থাকবে। ৩ বছর পরও পাবে ১৫ বছর পরও পাবে। তাই তোমাকে ঠিক ঐ রকম কোন বিষয়ের উপর ভিডিও বানাতে হবে যা মানুষ আজকে সার্চ করছে আবার ১৫ বছর পরও সার্চ করবে। জানার চাহিদা থাকবেই এমব বিষয়ে ভিডিও আনতে হবে। মানে তারা তোমার ভিডিও দেখবেই আর তুমি আউটপুট পেতে থাকবে। এড সেন্স এর মাধ্যেম বা স্পন্সরিং এর মাধ্যমে তোমার ইনকাম হতেই থাকবে। যারা তোমার ভিডিও দেখবে তারা অবশ্যই তোমার চ্যানেল ঘেটে আরো রিলেটেড কিছু জানার চেষ্টা করবে। রিলেটেড বিষয়েও ভিডিও পাবলিশ করবে। তাহলে এখানে কি তুমি তোমার কন্টেন্ট এর ভ্যালু বুঝতে পারছো?

আমি অবাক হয়ে বললাম, জ্বি আইডিয়া করতে চেষ্টা করছি ও বোঝার চেষ্টা করছি যে প্রচুর ভ্যালু এড করতে হবে প্রচুর!

তিনি আমাকে বললেন, তোমার আর কোন প্রশ্ন আছে আমার কাছে ? আমি বললাম, না আরো জানার আগ্রহ বাড়ছে আর কি। তিনি তখনই বলে দিলেন আমার চ্যানেলের নাম অমুক। আর সেখানে এই বিষয়ের উপর আরো ভিত্তি ও প্লে লিস্ট আছে। তুমি চাইলে আরো জানতে পারো আমার চ্যানেলে গিয়ে। আসলে আমি আমার সব রিসার্চ করা ভিডিও গুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে সাজিয়ে রেখেছি আমার চ্যানেলে। মজার বিষয় হলো আমার ১৩ বছর আগের ভিডিও থেকে আমার আজো ইনকাম আসে। বিষয়টা মজার না?

আমি বললাম হ্যা, আসলেই অনেক মজার। ভিডিও মার্কেটিং তাহলে ভাল প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ হলো হতে পারে আমাদের জন্য। আর আমি মনে মনে খেয়াল করলাম মাত্র কয়েকটা প্রশ্ন করাই তিনি আমার সাথে সব উত্তরেই স্টোরি টেলিং মার্কেটিং করে যাচ্ছেন। সুন্দর গল্প আকারে সব বলে যাচ্ছেন। আসলে ভদ্রলোকটি স্টোরি টেলিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন থাকে বড় বড় কোম্পানির ইম্লোয়ি দের।

তিনি আরো বললেন দেখো, একটা গোষ্ঠী হয়েই গেছে যারা লাইভ লাইভ টকশো, লাইভ খেলা বা লাইভ সেলিং এর মাধ্যমে বিজনেস করে যাচ্ছে। এখানেও তোমার মত তরুনরা বেশি ভূমিকা রাখছে যা আমি মনে করি। ভবিষ্যতে যে ভিডিও মার্কেটিং এর চাহিদা আরো কেমন হবে তা আমি ভাবতেই পারি না। শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা, ব্যবসা – বানিজ্য সবই ভিডিও কেন্দ্রিক।

আরো মজার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে শর্ট ভিডিওর চাহিদা আরো বেশি। কারন মানুষের চাহিদাই এমন হয়ে গেছে যে অল্প সময়ে বেশি তথ্য পেতে পছন্দ করে। এমনকি ভাল একটা প্রেজেন্টেশনও এ আই ভিডিওতে কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আরো ভিজুয়ালাইজড হতে পারছে মানুষ। কোন বিষয়ে ডিসিশন মেকিং আরো সহজ হচ্ছে।

আমি শেষ একটি প্রশ্ন করলাম, আপনার ঘড়িটা কোথাই থেকে কিনেছেন? তিনি এখানেও বেশ চমৎকার একটি স্টোরি নির্ভর উত্তর দিলেন। তিনি প্রথমে ইউটিউব রিভিউ দেখেছেন। তার পর আসল ও নকল ঘড়ির ভিডিও দেখেছেন। পার্থক্য বুঝেছেন তারপর সেলারদের সাইটে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আসল ঘড়িটা কিনেছেন এবং মজার বিষয় তিনি এখনো এনালগ ঘড়ি পড়েন ও ঘড়িটা ৬ বছর ব্যবহার করছেন। এর মাঝে ২ বার ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়েছে আর সেটাও ভিডিও দেখেই আসল ব্যাটারি কিনেছেন। উত্তরটি ভিডিও মার্কেটিং নির্ভর ছিল তবুও ৬ বছর আগের ঘটনা। যা আমাকে অবাক করেছে আরো। তিনি তখন থেকে আপডেটেড।

যারা ভিডিও মার্কেটিং করেন তাদের জন্যে সংলাপটি একটি ছোট এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারি ঘটনা হতে পারে। ভিডিও মার্কেটিং করতে সংলাপটি উৎসাহ সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

0
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *