১০ টি খারাপ অভ্যাস যা আপনার ব্রেইনকে অকেজো দিচ্ছে
“জ্ঞান অর্জন করা বুদ্ধিমত্তা নয়, আসল বুদ্ধিমত্তা হলো কল্পনা শক্তি থাকা” কথাটি বলেছেন আলবার্ট আইনস্টাইন । এমন কিছু খারাপ অভ্যাস রয়েছে যা আপনার বুদ্ধিমত্তা কমিয়ে দিচ্ছে। এমন ১০ টি খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্তি পেলে আপনি আরো বুদ্ধিমান ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। আশা করি আপনাদের ব্রেইনের উন্নতিতে সহায়তা করবে নিচের উপস্থাপনা গুলো।
১। লোকের কথা কানে নিবেন নাঃ কারোর কোন কথায় রাগ, অভিমান বা দুঃখি হবেন না। এমনটা হলে এটা আপনার ব্রেইন এর জন্য খারাপ একটি অভ্যাস হয়ে যাবে। লোকেদের সব কথায় নিজেকে মাখিয়ে নিলে সেটা ভাবতে ভাবতে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। সময় নষ্ট হবে আপনার। অথচ সেই সময়ে আপনি নিজের কোন সমস্যা সমাধান করতে পারতেন বা নতুন কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে পারতেন। আর আপনি কিনা সেই সময়টি ব্যয় করছেন আপনাকে নিয়ে বলা কথা ভাবতে ভাবতে। এমন অবস্থা হলে আপনার ক্রিয়েটিভিটি কমে যাবে । তাই সবার সব কথা কানে নিবেন না।
২। অতীত নিয়ে বেশি ভাবনাঃ অতীত থেকে আমরা দুইটা জিনিস পেতে পারি যেমন, অতীত থেকে শিখতে পারি আর সামনে এগিয়ে যেতে পারি নয়ত দুঃখি হই আর হতাশায় ভুগি। প্রতিটি মানুষেরই আলাদা আলাদা চিন্তা, প্রতিটি মানুষেরই আলাদা আলাদা অতীত। অতীত ভাবতে আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়। অনেক সময় ভাবতে ভাবতে আমাদের মুড অফ হয়ে যায়, ভেঙ্গে পড়ি আমরা । আসলে এখানে সময়ের সাথে সাথে ব্রেইন এনার্জি খরচ করি। অতীত নিয়ে ভাবনার চাইতে আপনি সেই সময়ে প্রোডাক্টিভ অনেক কাজ করতে পারতেন, বা নতুন আইডিয়া ভাবতে পারতেন। সময়ের মূল্য জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই।
৩। টেনশনমুক্ত থাকাঃ প্রয়োজনের থেকে বেশি টেনশন ব্রেইনের জন্য ভাল কিছু নয়। এই ধরুন পরিক্ষায় নম্বর কম পেয়েছেন, কেউ আপনার পেছনে কিছু বলেছে বা আপনার ব্রেক আপ হয়েছে এমন অনেক কিছুই ঘটে জীবনে । এখানে যদি আপনার মনে হয় টেনশনে জীবনের সব শেষ, তাহলে সেটা জীবন হতে পারে না। মানে আপনি টেনশনে বোকার রাজ্যে আছেন। মাঝে মাঝে কোন জিনিস নিয়ে আমরা এতটাই ভাবি যা সেটা প্রত্যাশাই করে না। একটি পাথরকে চোখের যত কাছে থেকে দেখবেন সেটা তত বড় দেখাবে, যত দূর থেকে দেখবেন তত ছোট দেখাবে । সেভাবে আপনার সমস্যাকে দূর থেকে দেখুন। সমস্যাকে সমস্যাই মনে হবে না। সমাধান মাথায় চলে আসবে। সবসময় টেনশন আর স্ট্রিস ফ্রি থাকুন।
৪। কাজের সময় ঠিক করুনঃ না ঘুমানোর সময় ঠিক আছে, না ঘুম থেকে ওঠার সময় ঠিক আছে। না ব্যায়ামের হুদিস আছে, না মেডিটেশনের খবর আছে। পুরাই ছন্ন ছাড়া জীবন যাপন। অনিয়মিত রুটিন। না ঠিক আছে গোসলের সময় না ঠিক আছে খাওয়ার সময়। এসব করতে করতে সময়ের যাতাকলে পড়ে দিনশেষে আসল কাজটিই করা হয়ে ওঠে না। বাদ দিন অনিয়মিত জীবন যাপন। ব্রেইনকে সময়ানুবর্তিতার ট্রেইনিং দিন।
৫। অভিযোগ এর প্রবনতাঃ অভিযোগ এমন এক জিনিস যা ব্রেইনে ময়লা জমা করে ফেলে। অনেকে আছেন যারা জীবনের সব জায়গাতে পারফেক্টই খুজতে থাকেন। সেটা হতে পারে বন্ধু নির্বাচনে, লাইফ পার্টনার নির্বাচনে, ফ্যামিলি নির্বাচনে। আর এই টেন্ডেন্সি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে, যখনই কোন কিছু সামনে আসে সেখানে ভুল আর অভিযোগ চলে আসে অজান্তেই । এই খারাপ অভ্যাসে মানুষ সাময়িক সন্তুষ্টি পায়। তাই স্টেফিন হকিং বলেছিলেন, “জ্ঞানের সব থেকে বড় শত্রু হলো নিজেকে জ্ঞানী মনে করার ভ্রম“। এটি মস্তিষ্ক ও ক্রিয়েটিভিটিকে নষ্ট করে দেয়।
৬। ওভার থিংকিংঃ একটি কাজ শেষ করতে না করতেই আমরা অন্য একটি কাজে জড়িত হয়ে পড়ি। প্রয়োজন এর থেকে বেশি ভাবা ঠিক নয়। এক সমস্যা থেকে বের হতে না হতেই আমরা অন্য একটি সমস্যাই জড়িয়ে পড়ি। আর এভাবে ওভার থিংকিং এর মধ্যে পড়ে যাই। সবারই ভাবনাই স্বাধীনতা আছে আবার এটার সীমাবদ্ধতাও আছে । ওভার থিংকিং ব্রেইনকে প্যারালাইস করে দেয়। থিংকিং আর অভার থিংকিং এর মাঝে অনেক পার্থক্য আছে।
৭। বর্তমানে স্থির থাকুনঃ বর্তমানে যা হচ্ছে বর্তমান এর সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। মানে আপনার চিন্তা অতীত আর ভবিষ্যৎ এ ঘুড়ে বেরাচ্ছে। বিষয়টা যদি এমন হয় তাহলে সেটা ভাল কিছু নয়। আপনি শুধু অতীত আর ভবিষ্যৎ এর মাঝে বাউন্স খাচ্ছেন। ব্রেইনের জন্য এমন অবস্থা খুবই খারাপ। নিজেকে সব সময় বর্তমানে রাখতে হবে। অতীত থেকে ভবিষ্যৎ আর ভবিষ্যৎ থেকে অতীতে বাউন্স করা যাবে না।
৮। অন্যকে খুশি করার চেষ্টাঃ অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজের সময় ও শান্তি নষ্ট করা ব্রেইনকে দূর্বল করার অন্যতম কারন। নিজের কথা না ভেবে, নিজের বারোটা বাজিয়ে অন্যকে খুশি করার মাঝে স্বার্থকতা নেই। এটি একটি ভয়ানক খারাপ অভ্যাস যা আপনার ব্রেইনকে দূর্বল করে দেই।
৯। মোবাইল ফোনের নেশাঃ সকালে বেডে শুয়ে ফোন চালানো ভয়ানক একটি খারাপ অভ্যাস। সকালের নোটিফিকেশন গুরুত্বপূর্ন কাজ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে দেয়। সকাল সব চাইতে উত্তম সময় নিজের স্বপ্নকে গড়ে তোলার, পরিশ্রম করার, নিজেকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার। সকালে ব্রেইন সবচাইতে বেশি ফ্রেশ থাকে। মোবাইল আপনার পাওয়ারফুল সময়টাকে বরবাদ করে দেয়। স্মার্ট ফোনটিকে আরো স্মার্ট হিসাবে ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে। যেন আপনার ব্রেইনকে তা সহায়তা করতে পারে।
১০। রাগ থেকে বিদায়ঃ কথায় কথায় রেগে যাওয়া অভ্যাস আপনার ভাল চিন্তাকে শেষ করে দেয়। নিজেকে বুদ্ধিমান, জিনিয়াস, শক্তিশালী ও অভিমানি তখনই মনে হয় যখন রাগের জন্ম হয়। তখন নিজেকে অন্যের থেকে উচ্চতর মনে হয়। আপনি যত বেশি রাগ করবেন ততই বুদ্ধি লোপ পেতে থাকবে। নিজেকে আর মস্তিষ্ককে যত শান্ত রাখবেন আপনি তত বুদ্ধিমান ও জিনিয়াস হতে পারবেন। রাগ এবং অহংকার এই দুটি মানুষের ব্রেইন ও জীবন দুটোকেই মারাত্মক ক্ষতি করে।
আশা করি পাঠক ভাই-বোনেরা এই ১০ টি বিষয় জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। আপনার জীবনের পরিবর্তনে যদি লিখাটা ছোট কোন ভূমিকা রাখতে পারে তাহলেই স্বার্থকতা। আমাদের লিখা আপনাদের আরো আধুনিক করে তুলুক। আল্লাহ হাফেজ।